পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের (পিআরবি) সংশোধিত নতুন নিয়মে বাংলাদেশ পুলিশে ক্যাডেট উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও সার্জেন্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। আগামী নভেম্বরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

এসআই ও সার্জেন্ট নেওয়ার সংখ্যা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অবসরজনিত শূন্যপদসহ মোট পদ হিসাব করে এর সংখ্যা চূড়ান্ত করা হবে। প্রথমে এসআই ও পরে সার্জেন্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে মোট ১১টি ধাপ অনুসরণ করে একজন যোগ্য প্রার্থী বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাবেন।

বর্তমানে সারাদেশে কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। আড়াই হাজার পুরুষ ও ৪৫০ জন নারী কনস্টেবল পদের জন্য ১০ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। আবেদন নেওয়া হবে আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এসআই পদে সংশোধিত বিধিতে ন্যূনতম উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে পুরুষ ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও নারী ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। যা আগে ছিল যথাক্রমে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি ও ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। সার্জেন্ট পদে পুরুষের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি আর নারীর ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি।

উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কম্পিউটারের এমএস ওয়ার্ড, এক্সেলসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম জানা, বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক ও সাধারণ জ্ঞানে লিখিত পরীক্ষায় ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ সদরদপ্তর পিআরবি ১৯৪১-এর বেশ কয়েকটি প্রবিধান সংশোধন এনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে সংশোধনগুলো প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হয়। পুলিশের প্রস্তাবের যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসআই/সার্জেন্ট নিয়োগে পুরুষের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি থেকে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি।

নারীর ক্ষেত্রে ন্যূনতম উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। জনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তার শারীরিক গঠন, উচ্চতা, সুঠাম দেহের অধিকারী ও সক্ষমতা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভিন্ন ও ব্যতিক্রমী হওয়া বাঞ্ছনীয়। যেন হাজারো মানুষের মধ্যেও একজন পুলিশকে দেখা যায়। যা বাংলাদেশ পুলিশকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আধুনিক ও যুগোপযোগী পুলিশ বাহিনীতে পরিণত করতে সহায়ক হবে।

এছাড়াও মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে প্রার্থীর শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি কৌশলগত জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতার বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কম্পিউটার তথা এমএস অফিস, ইন্টারনেট, ট্রাবল শুটিং ইত্যাদিতে সম্যক জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।

আরও বলা হয়- অপরাধের ধরন পরিবর্তনের কারণে অপরাধের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। এক্ষেত্রে একজন প্রার্থীকে যেসব বিষয় যাচাই করার তা ২৫ নম্বরের মধ্যে সম্ভব নয়, তাই মনস্তত্ত্বের লিখিত পরীক্ষার নম্বর ৫০ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পিআরবির সংশাধন অনুযায়ী এসআই (নিরস্ত্র), সার্জেন্ট ও টিএসআই পদে নিয়োগের জন্য সংশোধিত বিধি অনুযায়ী পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুলিশ সদরদপ্তর নিয়োগের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া পুলিশের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়ও দিতে হবে। এসআই পদের জন্য দরখাস্ত করতে হবে পুলিশ সদরদপ্তরের ওয়েব পোর্টালে অথবা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।

আবেদনকারীর উচ্চতা বিবেচনায় ৪৫ শতাংশ, এসএসসি বা সমমানের ভালো ফল বিবেচনায় ১৫ শতাংশ, এইচএসসি বা সমমানের ভালো ফল বিবেচনায় ১৫ শতাংশ এবং ডিগ্রি অথবা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভালো ফল বিবেচনায় অন্য ২৫ শতাংশ প্রার্থী বাছাই করা হবে। সাধারণ কোটায় কোনো প্রার্থীর উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি হলে সর্বোচ্চ ৫০ পয়েন্ট পাবে।

৫ ফুট সাড়ে ৯ ইঞ্চি হলে ৪৭.৫ পয়েন্ট, ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি হলে ৪৫ পয়েন্ট, ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি হলে ৪০ পয়েন্ট, ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি হলে ৩৫ পয়েন্ট, ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হলে ৩০ পয়েন্ট পাবে। একইভাবে এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলে ন্যূনতম জিপিএ ২.৫ হলে ৩০ পয়েন্ট এবং সর্বোচ্চ ৪.৫ বা তারও বেশি হলে ৫০ পয়েন্ট প্রাপ্ত হবে।

এভাবে পুলিশ সদরদপ্তর দফতর স্বয়ংক্রিয় স্ক্রিনিং করে যোগ্য প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করবে। এ তালিকা শূন্যপদের চেয়ে ৫ গুণের বেশি হবে না। এ তালিকার প্রার্থীদেরই শুধু শারীরিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে।

সংশোধনে বলা হয়, উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক রেঞ্জেস থেকে শারীরিক মাপ নেওয়া হবে। এর মধ্যে উচ্চতা, বুক (পুরুষ প্রার্থীদের), ওজন ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই, সহনশীলতা পরীক্ষা এবং প্রচলিত দৌড় (৭ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে পুরুষ ১৬০০ মিটার, নারী ৭ মিনিটের মধ্যে ১০০০ মিটার), লম্বা লাফ (পুরুষ ৩ দশমিক ৫ ফুট এবং নারী ২ দশমিক ৫ ফুট), ওপরে তুলে ধরা (পুরুষ ৪০ সেকেন্ডে ১৫ বার এবং নারী ৩০ সেকেন্ডে ১০ বার), সিট অ্যাপ (পুরুষ ৪০ সেকেন্ডে ১৫ বার এবং নারী ৩০ সেকেন্ডে ১০ বার), টানা (পুরুষ ৩০ ফুট ১৬০ পাউন্ড, নারী ২০ ফুট ১২০ পাউন্ড) এবং দড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা (পুরুষ ১২ ফুট এবং নারী প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৮ ফুট)।

সারাদেশে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এসপি পদের নিচে নয় এমন কর্মকর্তাদের দিয়ে পুলিশ সদরদপ্তর প্রশ্নপত্র তৈরি করবে। ১০০ নম্বরের পৃথক দুটি প্রশ্নপত্র থাকবে। পরীক্ষার নির্ধারিত সময় ৩ ঘণ্টা। এতে ইংরেজি ও বাংলা রচনা ছাড়াও সাধারণ জ্ঞান ও অঙ্ক থাকবে। এছাড়াও নতুন নিয়মে থাকছে ৫০ নম্বরের মানসিক পরীক্ষা।